Skip to main content

আয়েশা খাতুন

অনাদি চরণ

     আজ ভোরটা একটু কালচে এবং ইসৎ লালচে হয়ে জন্মাল। পাখিদের চোখ বলে দেয় সূর্যটা বুঝি কাছে চলে এল। গাছের ডালে পাতার সঙ্গে ঘুমায়। কিন্তু শেষ রাতের অংশটা পাখিগুলো ক্ষুধাময় হয়ে ওঠে। ডানার মাংসপেশি হালকা ফুলতে থাকে, ঘাড়ের রোয়াগুলো জাগতে থাকে। পাখিটা তখনও ঘুমায়। যতক্ষণ না জাগে ততকক্ষণ বরং একটু অন্য কথা বলে নেওয়া যাক।
অনাদি চরণ মণ্ডল প্রতিদিন ভোর বেলায় কাপড় পাল্টে পরিচ্ছন্ন ধুতি পরে, গোল গলার সাদা   গেঞ্জি তার উপরে হাল্কা পিস্তা রঙের ফতুয়া। হাতে কাপড়ের থলে, যাতে কিছু রেজকি থাকে। এই ভোর বেলাতেই চলে আসছে চল্লিশ বছর ধরে তার চায়ের দোকানে।
বাঁকসাড়া থেকে বকুলতলা অনেকটা রাস্তা। আগে কিছু ছিল না। এখন অটো, ভ্যান চলে। অনাদি চরণ অবশ্য পায়ে হেঁটে আসাকে অতি ভালো, সবার জন্যে, বলেই ভেবে রেখেছে। অনাদি চরণের বকুলতলায় পৌঁছাতে আধ-ঘন্টা লাগে। এখন সে বাঁকসাড়ার ফোরহাদের দলিজটা পেরিয়ে সরু ড্রেনটার সেতুতে উঠবে। উঠতে আরও দশ মিনিট। ফোরহাদের দলিজে পনেরটা ফুল মেশিন, গের-র-র-র শব্দ। যদিও অনাদি চরণ যখন আসে এবং যখন বড়ি ফেরে তখন ফোরহাদের দলিজের মেশিন এবং কারিগরেরা ঘুমায়।
অনাদি চরণ আর কিছুক্ষণ পরেই হাঁসখালি ড্রেনটির সেতুতে উঠবে, এই সেতুটি আন্দুল রোডের উপরে নয়। যতক্ষণ সে না আসে ততক্ষণ অনাদি চরণ কে? কেনই বা তাকে দিয়ে গল্প, বলে নি। অদ্ভূত জীবন্ত জীবন। প্রতিটি মূহূর্ত যদি জীবন্ত সৃষ্টিময় হয়, তাহলে অনাদি চরণের সৃষ্টিও প্রাণবন্ত।
হাঁসখলির সেতুতে পা রেখে অনেকক্ষণ গঙ্গাটার পানে চেয়ে থাকে। হাঁসখালির ড্রেনটি সব সময় জোয়ার ভাঁটায় ব্যস্ত, বড়বাবু গঙ্গার কাজের সঙ্গে। গঙ্গার এক বুক জল, তা ঘোলাটে। আর হাঁসখালির একমুখ জল, তা হাওড়ার নানান শহরের নোংরা, পচা-গলা মলমুত্র বহন করা। হাঁসখালি একটা নরকের নদি তার কাছে। দাঁড়িয়ে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে - থকতে থাকতে - গঙ্গার উদেশ্যে চিৎকার করে, ওহে বড়বাবু তোমার নোংরা নেওয়ার গর্তটা এবার বোজাও। বড়দার উচ্ছ্বাস নিয়ে হাঁসখালির নরকের নদিটাতে সমতা আনা যায় না। অনাদির চিৎকার আর নরকের নদী শব্দ দুটি এক হলে হাঁসখালি ক্ষেপে ওঠে। লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বুক ফুলিয়ে অনাদির শুভ্র-সুচীময় ধুতিটাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনাদি চরণ হাঁসখালির বেতমিজি দেখে ভাবে, কান ধরে কানসাটায় চড় পড়লে যদি কিছু হয়... । তারপর আবার চলতে থাকে। সেই সময় করপরেশন এলাকায় ঢুকে পড়ে। রাস্তার পাশে টাইম কলে জল চর-চর-চর-চর করে পড়তে থাকে। শঙ্কর মাছের মত লম্বা পা দুটি পড়তে থাকা টাইমকলের জলে ধুয়ে নেয়। অনাদি কলটার ঘাড়ে ধরে বলে, ঘাড়টা মচকে দেবো। মুখে ঢাকনাও নেই। কানও নেই, চোখও নেই, জল ঢেলেই যাচ্ছিস, যেন পাক্কা শয়তান একটা গরমেন। বাপুত্তি সম্পত্তি! একাই ভোগ করবি আর বিনা কাজে ব্যায়? বে আক্কেলে।
পাখিরা আর একটু পরেই জাগবে। অনাদি চরণ পাখিদের জাগার আগেই তার বকুলতলার চায়ের দোকানে পৌছাবে। পাখিরা যতক্ষণ না জাগে - ডানা মেলে - ততক্ষণ অনাদি কাজ সারে। উনোনের ছাই ঝেড়ে ফেলে দুটো খড় দেয় শিখগুলোর উপরে। জাহেরা ঘুঁটো বেচে। তার ঘুঁটোগুলো সত্যিকারের গোবর দিয়ে তৈরি, ছোট আর পাতলা বাতাসার মত। তা হোক। শুকনো এবং খাঁটি গোরু মোষের গোবরের। জাহেরা গরীব - তার চেয়েও গরীব। বাচ্চাগুলো যেন তেলের ভাঁড়, নুনের ভাঁড়। স্বামী নামক আদমি - দুনিয়াকে জান্নাত বানিয়ে পচুই সুরাই ভরপুর...। তবুও জাহেরা সতী মেয়ে, খাঁটি গোবরের ঘুঁটো বেচে। পার্বতীর ঘুটো অনাদি কেনে না। তাতে কিসের কিসের মল মেশানো, যাতে আগুন পড়লেই বিচ্ছিরি অসহ্য এক দূর্গন্ধ ছড়াতে থকে। পার্বতীকে অনাদি হাঁসখলির নরকের নদী বলে।
অনাদির উনুনে গনগনে আগুন কয়েক কেটলি চা টগবগিয়ে ফোটাতে থাকে। অনাদি উনুনের এক পাশে লোহার হাতা ভাঙার ডাটটি রাখে, যেন আঁচকে একটু ভাগ করে নেয়। কোন মানুষ স্পেশাল চা চাইলে ছোট্ট সসপ্যানে চট করে বানিয় দেয়। কাঁচের গ্লাস তার বালতির গরম জলে চুবিয়ে রাখে। আগে মাটির ভাড় দিত। মাটির ভাড়গুলো যখন তার চোখের সামনে চা খেয়ে রাস্তার উপরে মানুষ ছুড়ে দিত, অনাদি নিজেকে হাঁসখলির নরকের নদী ভাবত। এঁটো কাপ ফেলার ঝুড়ি, উননের গাদা ছাই এক যোগে অনাদিকে বলত, ওহে এমন কিছু কর আমাদের যেন মাটি আপন করতে পারে। তুমি যে হাঁসখালি হয়ে যাচ্ছো! অনাদি ভাবে, ভাববার পর একটা পথ পায়। তারপর নিজ কর্মের বর্জ্য পদার্থ কোথায় ফেলবে ঠিক করে।
অনাদি হিন্দু ঘরে জন্মে কটি ভালো জিনিস শিখেছে, মায়ের কাছ থেকে। মাটিকে পরিচ্ছন্ন রাখা কাপড় সায়া সুত্র রাখা। মুসলমান বন্ধু মালাং এর কাছে শিখেছে দাঁড়িয়ে পেচছাপ না করা, পেচ্ছাপের পর সে স্থান জল দিয়ে ধোয়া। শরীরের বিশেষ বিশেষ স্থানের রোঁয়া সাফ করা। মালাং বলত, কখন মৌত আসে কে জানে? নিজের শরীর নিজে পরিষ্কার না রাখলে মৌতও ঘেন্না করবে শরীরে নামতে।
মালাং তাকে আরও শিখিয়েছিল পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস। মা হাওয়া আর বাবা আদম যখন ভুল করে গেঁবু ফল খায় তখন পেটের নাড়িতে মোচড় দিয়ে ব্যাথা । পায় পায় করে খিড়কি দরজা দিয়ে মাটি বের হয়। আল্লার ফরমান অমান্য করা - বজ্রহাঁক ধেয়ে আসে, আদেশ অমান্যকারী! তোমাদের খিড়কি দরজার বর্জ্য পদার্থ হাত দিয়ে তোল আর বগলে চাপা দাও। যাও দূর হও স্বর্গ থেকে। তারপর থেকে অনাদি কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করে। সবাই তাই করত। চায়ের দোকান তারপর দশ বছর পেরল। সব পাল্টাতে থাকলো। অনাদি একেবারে পাল্টাতে চায় নি। কিন্তু অভিযোজিত হতে থাকলো চার পাশের প্কৃতির দ্বারা।
পড়া জানে না কিন্তু ঠিক আর ভুল, বড় আর ছোট, সত্যি আর মিথ্যা, সাদা আর কালো, ঠাণ্ডা-গরম চিনত। বই পড়তে পারত না কিন্তু বন-জঙ্গল, গাছ-গাছালি চিনত, কীট-পতঙ্গ চিনত, মেঘেদের চিনত। কোনটা জল ঢালবে আর কে ঝড় তুলবে। অনাদির চারিপাশের মানুষের সঙ্গে মিশে থাকা মালাং - তার ছেলেপলেদের দেখা যায় না। মালাংকে ওরাবলে তাড়িয়ে দিয়েছে।
অনাদির দোকানে সকালে বেশ ভিড়। চা খায়। হপ হপ করে চা বিক্রি হয়। অনাদির দিনে পঁচিশ থেকে ত্রিশ কাপ চা পুলিশ ফাঁড়ি, রাজনীতির নেতা, অটোর লাইনের দালাল, সিটুর নেতা আর বি-গার্ডেনের গাছ-পাচারকারিদের দিতেই হয় এমনি এমনি। আগে অনেক ঝামেলা করতো। চিনি-চা-ঘুটে কি মাঙনা আসে যে চাইলেই চা মুখের কাছে নাচতে থাকবে? কিন্তু পড়তে পারা ছেলে যখন বি-গার্ডেনের অফিসারের কাজে যোগ দিলে-  ছেলে এসে বোঝাল, বাবা তোমার ছেলের চেয়ে অনেক বুদ্ধিমানরা চাকরির পরীক্ষা দেয়। তুমি পঞ্চাশ কাপ এমনি দিলে পুলিশ আমাকে বলবে ছেলের সৎ চরিত্র, রাজনীতির নেতার চিঠি ইন্টারভিউ নেবার অফিসারদের বলে দেবে এই ছেলেটিই একমাত্র বুদ্ধিমান আর উপযুক্ত আরও কত কি!
আনাদি হা হয়ে যায়, তু পাবি চাকরি? তোর সব কিছু যে কত ভালো তা আমার মত ভালো কে জানে রা? ই-দিকে আয়, চায়ের দোকানে কাজে লাগ। ছেলে বাবাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চাকরি নিল। মুঠো ভরা টাকা - সব পাল্টাতে থাকল। ভাঙা চাল ছপ্পর ছাদ হল। মোটর বাইক হল - চাকরি দেখে গাঙ্গুলি বাড়ির মেয়ে বৌমা হয়ে এল।
অনদি চুপ করে বসে থাকে - তার কানে একটা বাজনা ভেসে আসে - ড্যাড্যাং ড্যাড্যাং ড্যাগ-ড্যাগা-ড্যাং। অনদি চরণ ভাবে একটিই বাজনা? বাকিগুলো হল কি? রেশম চরকির বাজনা - কেরামতের বাজনা! অনাদি তার কানের ফুটোতে আঙুল ভরে কানের ময়লা পরিষ্কার করে, কান খারাপ হল এবার! অনাদির কি যে মতি হল বকুলতলার বি-গার্ডেনের দেওয়াল ধরে হাঁটতে গেল। অনাদি চরণ হাঁটতে গিয়ে একটু থমকে দাঁড়াল। প্রাচীরের গা বেয়ে বি-গার্ডেনের গাছগুলো হাঁটে, অনাদি থমকে দাঁড়ালে গাছগুলোও থমকে দাঁড়ায়। বকুলতলার দিকের বি-গার্ডেনের প্রাচীরের গায়ে মাঝে মাঝে ইট ছাড়া আছে, কারা যেন চটপট ওঠে আর নামে, অসংখ্যবার পা পড়ে দেওয়ালের খাঁজে।
অনাদি বি-গার্ডেনকে নিয়ে গর্ব করে - এমন বটবক্ষ পৃথীবির মানুষ কোথায় খুঁজে পাবে শুনি? এত রাজ্যের গাছ দেখতে হলে এই গার্ডেনেই আসতে হবে। আর এলেই দেখতে পাবে নাক্সভমিকা-ব্রাওনিয়া গাছ। আলমপুরের হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, ডাঃ গদাধর, যে মহেশতলায় থেকে পাশ করে পসার জমিয়েছে - তারকাছে গিয়ে বলে, তুমি ডাক্তার হয়েচো সত্য, কিন্তু নাক্সভমিকা - ব্রানোলিয়া গাছ - দেকেচো? একবার আমার সঙ্গে এসো!
অনাদি দেখেছে বি-গার্ডেনে এত উচু প্রাচীর ছিল না। সকালে হাঁটতে এসে তার দোকানে এক গ্লাস চা সবাই খেত। অনাদি চরণ থমকে যায়। বি-গার্ডেনের গাছের ডালপালা প্রাচীরের এপারে এসে পড়ে। মালাংদের বাড়ির কেউ তা কুড়িয়ে দৌড় লাগায়। অনাদি চরণ চোখ মেলে - কান খাঁড়া করে - মালাংদের জমি কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিল - মালাংরা বনেদি গেরস্থ ছিল - বউরা তাঁতের শাড়ি আর লম্বা ঘোমটা দিয়ে পারাপার করত - এখন এত অভাব মালাংদের! অনাদি প্রাচীরের দেওয়ালে চোখ লাগায়, সেকি আমারই - হারামজাদা - হারামখোর - নেমোখারাম ছেলে বি-গার্ডেনের অফিসার হয়েছে - আমারই ত্রিশ কাপ চায়ে। সে গাছের গোদিগুলোকে গঙ্গার জলে ফেলছে!
অনাদি নিথর। আর চায়ের দোকানে এল না - বাড়ি ফিরতে থাকলো। চলছে -- চলছে -- । ফিরতি পথে হাঁসখালির বাঁসের পুঁলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তার ধুতি, সাদা গেঞ্জি, পেস্তা রঙের ফোতয়া - সবই কালচে আর লালচে।
গঙ্গা থেকে গাছের গুঁড়িগুলো সারি সারি ভাসছে। একজন হাঁসখালি নালার মুখে গুঁড়িগুলির গতি পরিবর্তন করে হাঁসখালির নালায় ফেরাচ্ছে। অনাদির স্থির দৃষ্টি দেখে, ঠিক দেখে - দেখতে দেখতে বিষর্জনের সেই বাজনা শুনতে পায় - ড্যাড্যাং ড্যাডাং ...।
পাখিরা জেগেছে। দলে দলে পাখিরা বেরিয়ে আসছে গাছ থেকে। পাখিরা নয়, কাকেরা, কাক ছাড়া হাঁসখালির জলে ভাসমান পচাগলা কেউ খেতে পারে না। বি-গার্ডেনের গাছের ভাসমান গুঁড়িতে অসংখ্য দাঁড়কাক বসে আছে। ওটা যেন কাকেদের জাহাজ। কি আনন্দ! কাকেরা ভাসমান গুঁড়িতে বসে একটা পচা দেহে ঠোক্কর মারলে অনাদি শব্দ করে, আঃ আমরা এক একটা নরকের নদী! কাকেদের কালো ডানাগুলো জেগে উঠলো। ভোরবেলাটা অনাদির রক্তে একটু লালচে, কাকেদের ডানায় আজকের ভোরটা একটু কালচে!

Comments

Popular posts from this blog

সুদীপ্ত ভাস্কর দত্তের ছোটগল্প। ২০২১ : করোনার পরে।

audio testing গল্পকারের কণ্ঠে গল্প পাঠ  ২০২১ : করোনার পরে নদীর জলটা এত টলটলে, পরিষ্কার আগে দেখিনি কোনদিন! পাড়ে বসে একটা মুগ্ধতা নিয়ে স্বগতোক্তি করল অরুণ। বসন্তের আরম্ভে এই মৃদুমন্দ বাতাসটা প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছিল।। পড়ন্ত বিকেলে নির্জন নদীর তীরে, গাছের পাতার আড়াল থেকে একটা বউ কথা কও মাঝে মাঝে ডেকে উঠছিল। করোনা মহামারী রোধের চেষ্টায় সারা পৃথিবী জুড়ে যে লক ডাউন চলেছিল, তার ফলেই প্রকৃতি এখন দূষণমুক্ত, নির্মল।

আলী হোসেনের ছোটগল্প। এক এক্কে এক।

এক এক্কে এক : ছোট্ট বেলা নামতা পড়ার সময় এভাবেই শুরু করত মান্তু। তখন জানতো না কি এর মানে, কেনই বা পড়তে হয়। মা বলতেন, নামতা হল অঙ্কের মাথা। কিম্বা মেরুদণ্ডও বলতে পারিস। এটা ঠিকঠাক না শিখলে অঙ্ক মেলে না। যখন প্রাথমিক স্কুল ছেড়ে মাধ্যমিকে পৌছেছে, তখন মায়ের কথার মানে বুঝেছে মান্তু। কিন্তু পরিণত বয়সে এসে, আজ বুঝেছে এর অন্য মানে। এটা না জানলে, জীবনের মানেটাই পালটে যায়। মিলতে চায় না জীবনের অঙ্কটাও। মান্তু তখন ক্লাস এইটে। হঠাৎই দুঃসংবাদটা এলো। ক্লাসে সেলাই দিদিমনি, ফ্রেঞ্চনটের গীট ধরে আটকানোর চেষ্টা করছেন। বোঝাচ্ছেন, কিভাবে একে কব্জা করতে হয়। মান্তু কিছুতেই এই গিঁটকে কব্জা করতে পারছেনা। মাথার ওপর বোঁবোঁ করে ঘুরছে পাখা, অথচ ঘামের স্রোতে ভাঁটার টান নেই মোটেও। বাইরের বাতাসে উত্তাপের পারদ নিশ্চয়ই লু-লেবেল ছাড়িয়েছে। বাতাসের শুষ্ক বুকে তরঙ্গ তুলে সে ছুটে চলেছে শরীর জুড়াতে আন্য কোথাও, অন্য কোনখানে। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে চাঁদনি থেকে দোকানের মাল নিয়ে ফিরছিল ফারহাদ। হঠাৎই চরকির মত ঘুরে গেল মাথাটা। পিচ-গলা রাস্তায় আছড়ে পড়লো মস্ত শরীর। পথ-চলতি নজর চকিতে ঘুরে এল ফারহাদের দিকে। কে বলে কলকাতার হৃদয়ে উষ্ণতার অভা

আলী হোসেনের ছোটগল্প। খালি চেয়ার।

খালি চেয়ার : এই আছে এই নেই। সংসারের অমোঘ নিয়মে অহরহই ঘটে এমন ঘটনা। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটলো। এই তো, এই হল আমার চেয়ার। আমি মানে নিখিলেশ সাধু। আর-সকলের নিখিল। আমার চেয়ারটা যে ফাঁকাই পড়ে আছে দেখছি! কেউ কি বসে না এখানে? কেন? আমি কি ওদের কাছে অচ্ছুৎ হয়ে গেলাম? না না, এমন ভাবতে পারে, মনে হয়নি তো কখনও! আয়তাকার তিনটি টেবিল লম্বালম্বি করে বসানো। দৈঘ্য বরাবর দু’পাশে পরপর চেয়ার পাতা। সেখানেই সবাই বসে। প্রস্থ বরাবর পুবদিকে আমি, আর আমার উল্টোদিকে সুমন। আমার ডানদিকে দৈর্ঘ্য বরাবর বসে সীমা। দারুন সেজেগুজে অফিসে আসে আজকাল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় নাকি খুবই সাদামাটা ছিল ও, আর পাঁচটা মেয়ের মতই। বয়স চল্লিশের কোঠা যখন ছুঁই-ছুঁই, সাজগোজের বহরটা কবে কবে বেড়ে গেল। উগ্র না হলেও নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে বেশ সচেতন। আমি জানি, এরা সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। বিশেষ করে সীমা। হতে পারে সেটা আমার পেটরোগা দুর্বল শরীরের জন্য। হতে পারে মেয়েদের সহজাত করুণাশ্রিত আবেগই তার কারণ। আমি ভাবি, ব্যাক্তি-কেন্দ্রিক নগরজীবনে সেটাই কি কম? ও-ও-ই ওই-যে দক্ষিণ পাশে শর্ট হাইটের গাট্টাগোট্টা চেহারার মানুষটা, ওর নাম প্রেম নাথ। মজা করে সবাই বলে, ম