Skip to main content

তৈয়েব হোসেন

গাড়োয়ান

দুপুরের খাবার পর রোজকার মত আজও এসেছে টি.ভি দেখতে। এটা তার অভ্যাস। টি.ভি না দেখলে দুটো দুখের সুখের গল্প করে বাড়ি যায় নুরমানের মা, তুমাদের টেলিভিসেন টো লাগিন দাউ কেনে গো মুসু। জিমি উত্তর দিল, কারেন নাই। নুরমানের মা বলে আ-বাছা তুদের কারেন-ই থাকে না, না থাউক গো, তুমার সাসুড়ি কুথা গেলো মেনোকা? জিমির পাঁচ বছর বয়স, কথা বলে অনর্গল। উত্তর না দিয়ে থাকতে পারে না, গল্প করবে তো? নুরমানের মা বলে, তু চুপ কর তো বাপু, ছুটু ছেলে লয় আর কথাই কথাই উত্তর দেই। বলেই পিঁড়ের কোন থেকে একটা তালাই নিয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের মনে বলতে লাগলো, অনেক দিন হয়ে গেলো লুলুনির কোনো খবর পাই নি, জানি না বাছা আমার কেমুন আছে, কে জানে? এই বলে চুপ রইলো, এমন সময় এসমসারা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে আমাদের বাড়িতে এসে বললো – ই আবার কে লো, ঘুমাইছিস না আল্লার সাতে গল্প করছিস। নুরমানের মা আস্তে আস্তে উঠে বললো, না বুন, হোসেনের বিয়ের লোক আলছিল, আমরাও দেখতে গেলছিলাম, পাকা কথা হঁয়ে গেল।
এসমসারা – কি কি দিছে বুন?
নুরমানের মা – এক ভরি সুনা, পাঁচ হাজার টাকা, এক জুড়া গরু গাড়ির চাকা, আর লেপ বালিস, সঙ্গে যা দিতে হয় দিবে।
এসমসারা – তা বুন মেলাই দিছে আবার কি এই বার সুক সান্তি আল্লার হাতে, তা দিন কবে হলো বুবু?
নুরমানের মা – সউনের সাতাস তারিক।
এসমসারা – আল্লা তুর ভালো করুক, তা হা বুবু, তুর নানির নামে চাটি ভাত দিবিনা হা?
নুরমানের মা – কাল তো হবে না, সুকুরবার মৈলবির পালি আছে, ঐদিন আসিস তু চাটি খাবি মুরগির গোস দিয়ে। এসমসারা – তা বেস আল্লা তুর ভালো করবে, না বুন আসরের সুমই হঁয়ে গেল নামাজ পড়তে হবে, যাই ঘরে কেউ নাই। এমন সময় মা এসে বলে, হা বুবু বস কেনে, কুখুন এলি? মাদুর পেতে দিলো কিন্তু কেউ বসলো না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বললে শুরু করলো নুরমনের মা, বলতে তো নাই, না বললে লয় আর বলবো বলে বলছি- হোসেনের বিয়ের দিন ঠিক হলো, তাই তুমা দিখিন বলতে এলাম, তুমরা সবাই যাবে সতাসে সাউন, আর একটা বরযাত্রি ধরা আছে যেগুলো মুসু।
মা – হেঁ, তাই না যাওয়া হয়, বিয়ে বলে কথা।
নুরমানের মা – বেস আর বসবো না, অনেক খুন আলছি আসরের নামাজ কাজা হয়ে যাবে, আর ও সবাই কে বলতে হবে তো, বেটা ছেলের বিয়ে যাদের ঘরে হয় তারা যানে কত কাজ, না যাই।
বিয়ের দিন কাছিয়ে এল। বিয়ের আগের দিন হোসেন দেখা করতে এলো মাকে। হোসেনের খুব ফুর্তি, মনে চাঞ্চল্য। গায়ে হলুদ মেখেছে।
মা- আয় আয় বস, তা হা-রে লুহার যাঁতি নিয়েছিস তো?
হোসেন – হেঁ গো বুবু নিয়েছি এই দ্যাখো, হোসেন কমর থেকে যাঁতি দেখাতে গিয়ে বলে উঠলো, এজ-জা হলো? কি হবে বুবু?
মা – দাড়া বাঁদর একটি লুহা দি নাহলে ঘর যাবি কি করে? যানিনা পরিতে না ভুতে নিয়ে যাবে তার ঠিক নাই। এই বলে ধানের তলার নিচে থেকে একটা ভাঙা টিনের টুকরো বের করে হোসেনের কমরে বেঁধে দিল দড়ি দিয়ে, যা তু এবার যাতি খুঁজগাহোসেন ভেবে পায় না কোথাই সেই যাঁতি। বিকেল বেলা স্নান করাতে এলো হোসেনের বন্ধুরা ও তার সঙ্গি জাব্বার। স্নান শেষে হোসেন, ‘জাব্বেরে, তু সাবান তেল যে গলা বাঁচলো এইগুলো আর এই দশ টাকা লে, কাল যখুন বরযাত্রি যাবি তখুন সিকরেট বিড়ি কিনে খাবি। জাব্বার খুব খুশি। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে এলো, ক্ষীর খাওয়ানো হবে, সেগুলো নিজের ঘরে কাপড় পরতে এসে দেখে ক্ষীর খাওয়ানো চলছে মেয়েরা হাত ঢোল বাজাচ্ছে গান করছে (পাও মে আলতা রাস্তা মে কাদা আমি কোন রাস্তায় যাবো রে) জব্বার একটা পিড়ের উপরবসে দেখতে লাগল। ক্ষীর খাওয়ার পর মাথাই সুঁদা বাঁটা দিল ও গান করতে করতে হোসেনের চার পাশে ঘুরতে লাগলো। সুঁদা বাঁটার জন্য একটা লাল রঙের নতুন শাড়ি তার বোন লুলুনি পেয়েছে। সেই শাড়ি পরে সে নাচলো। অনুষ্ঠানের পর হোসেন জাব্বারকে বলিল, ‘আমার যাঁতি টো জানিস?
জাব্বার – না বে সালো, তুর যাতি আমি কি করে জানবো? জানিনা, কুথা যা রেখেছি – যা হবে হোক, লুহা তো আছে- বলে চুপ করে রইলো হোসেন। চো সই গা – বিছানার দিকে রওনা দিলো।
হোসেন – জাব্বার তু জানলার ধারে শো আর আমি এই পাশে বলে যেই শুয়েছে, আর ওমনি হোসেন আহঃ মা গো মরে গেলাম রে জাব্বেরে।
জাব্বার – কি হলো? মাজাতে কি ঢুকলো দেখ তো। জব্বার দেখলো তার কোমর থেকে রক্তপাত হচ্ছে। ঘাবড়ে গিয়ে জব্বার ভাঙা টিনটা টেনে বের করলো।
জব্বার – এক কাজ কর, টিনের বদলে গাড়ির লুহার চাকা টো ধরে বসে থাক আর আমি কিলা কে ডেকে নিয়ে আসি। ইনজিসান বড়ি দিলে সব ভালো হয়ে যাবে, কেউ জানতে পারবে না। কিলা হাতুড়ে হলেও তার নাম ডাক আছে।
হোসেন – যা তাড়াতাড়ি যা, না হলে বিয়ে করা উঠে যাবে। ডাক্তার ডেকে নিয়ে এলো জাব্বার।
ডাক্তার – কুনু চিন্তা নাই, ইঞ্জিসান দিলাম, আর এই বড়ি কয়টা খা ঠিক হয়ে যাবে, আর টিন বাদ দিয়ে একটি গোল লুহা নিয়ে শুয়ে থাক। আর জিন পরির ভয় থাকবে না। পরের দিন সকালে জব্বার – আমি পাজামা পানজাবি পরে আসি, তু তা করতে সাজাকুজা করে উজু করিস। আমি এলাম বলি, এসে সাইকেলে চাপিনে মজিদ নিয়ে যাবো সালাম করাইতে।
জাব্বার বাড়িতে গিয়ে দেখে হোসেনের যাতি তাকের উপর আছে, তখন তার মনে পড়লো সে তাকে যাতিটি ধরতে দিয়েছিলো। পাঞ্জাবি পাজামা পরে আতোর লাগিয়ে যাতিটিকে হাতে নিয়ে এলো হোসেনের বাড়িতে। হোসেন দেখে, তার যাতি আছে জাব্বারের হাতে, দেখেই আগুন, তার মনে পড়ে যায় কিভাবে গেলো তার কাছে। মাথায় হাত দিয়ে হোসেন ‘তুর কি একবারও মনে পড়ে নি? সালা হারামি তুর লেগে কতো কি হয়ে গেল, ঘুম হলো না রাতে।
জাব্বার যা হবার তো হয়েই গেল, কি করবি ভাই, আমার একবারও মনে ছিল না। চল দেরি হচ্ছে, জানিস ছয় জুড়া কাড়ার গাড়ি, আর পাঁচ জুড়া গরুর গাড়ি, ভালোই লাগবে বল? জানিস তুকে ও ফাটাফাটি লাগছে। আয়নাটা সামনে ধরে – এই দেখ কেমুন লাগছে। হোসেন একটু হাসলো তাতে জাব্বার ও খুসি হল মনে মনে। সব পুরানো কথা ভুলে গেল। এমন সময় হোসেনের মা ডাক দেয় নিচ থেকে – ‘আই রে বাপ, হলো হা দেরি করিস না আই। বর টুপি মাথাই নিয়ে নেমে এলো হোসেন। মা ও বাবাকে সালাম করে গরুর গাড়িতে উঠলো। বরের গাড়ির গাড়োয়ান হল জাব্বার সে খুব ভালো গরু ডাকতে পারে। এক সময় থানার বড়বাবুর জিপ গাড়ি সে চালিয়েছে, সেই জন্য তার নাম ডাক আছে এই অঞ্চলে। এই গাড়িতে বরের তিন বন্ধু মানিক হিমাই, মজিম আর আমি।
বর্ষার সময় ঝিম ঝিম বৃষ্টি পড়ছে হাল্কা মেঘের গর্জন, কেনেলের পাড়ে পাড়ে গাড়ি চলছে লাইন দিয়ে। বরের গাড়ি সামনে আছে, আর গরুগুলির শিং-এ লাল ফিতে বাঁধা।
জাব্বার – মানকে নেমে দেখ কাঁজ গুজি ঠিকঠাক আছে নাকি। আবার একটু পর বলল- তা হা বে হোসনা বর্ষার দিনে বিয়ে তো লাগায়লি ছাতা টো ধর আমি ভিজছি নাইলে গাড়ি কেনেলে নামিয়ে দুবো। ভয়ে হোসেন তাড়াতাড়ি ছাতা ধরে বসে জাব্বারের পিছনে। যতই হোক বিয়ের ব্যাপার বন্ধু জব্বার এর মন রাখতে হবে তো? টপের ভিতর থেকে সুনা যাচ্ছে গরু ডাকানোর আওয়াজ বিভিন্ন ধরনেরজাব্বার – হো পা পা চো চো আর এক ঘন্টা চো, হঠাৎ গাড়ি বাঁ দিকে গড়ে গেল, জাব্বার চেষ্টা করেও গাড়ি তুলতে পারলো না। জাব্বার সবাই কে নাম তে বলল গাড়ি থেকে, হোসেন ভয়ে নামতে গেলে জাব্বার ধমক দিয়ে বলে তু নামলে ছাতা ধরবে কে? তুরা সব কু পয়া, জীবনে প্রথম গাড়ি লাগল, চাঁকা ঠেল না হলে গাদে ঢুকে যাব। একটু যাচ্ছে আবার চাঁকা ঢুকছে মাটিতে, যখন পারছে না তখন রাগে জাব্বার হোসেনকে বললো, ছাতা ধরতে হবে না, তুর টুপি আর ওড়না টো আমাকে দে, নিয়ে গাড়ি ঠেলে যা। সবাই গাড়ি ঠেলছি সামনে এক জন গরুর দড়ি ধরে টানছে। জাব্বারের বাঁ হাতের কবজায় লাল রুমাল বাঁধা ও হাতে পাচন আনা হাতে ছাতা ও মাথায় হোসেনের টুপি ও গায়ে ওড়না দিয়ে গরু ডাকাচ্ছে।
জাব্বার- রাস্তাঘাট দেখে বিয়ে করতে হয় বুঝলি হসনা? রাস্তা যা খারাপ তাতে যাবে তো?
হোসেন- হেঁ রে ডাকা কেনে ঠিক যাবে, গোলে গোলে ডাকা গাড়ি আর লাগবে না।
আধ ঘণ্টা চলার পর হোসেন যখন পা ধুয়ে গাড়িতে উঠে দেখে তার ডান পায়ের চপ্পল নাই, পড়ে গেছে। ‘কি হবে?’ জাব্বাব বলে, ‘যুতো হারা ভালো লক্ষণ জানিস হসনা? ভালো বৌ পাবি। এক কাজ কর, আমার যুতো পরে তু বিয়ে করে লে বুঝলি। আসার সময় জুতো-টোকে খুঁজে বার করবো, হোসেন বলে, ঠিক আছে তাই হবে চল। হোসেন ও জব্বারকে চেনা যাই না কে বর তবে যার মাথাই লাল টুপি থাকবে সেই বর মনে হচ্ছে। একটু পরে গ্রামে ঢুকার আগে, জাব্বার হোসেনকে বলে, ‘আমার হাত ধরে গেল, রাস্তাও ভালো আছে তু একবার ডাকা’
বৃষ্টি থেমেছে সবে। হোসেন গরু ডাকাচ্ছে। আর জব্বার মাথায় বর টুপি ও ঘাড়ে লাল ওড়না নিয়ে পিছনে বসে আছে। গ্রামের রাস্তার দুধারে মেয়েরা অপেক্ষা করছে বিয়ের গাড়ির জন্য। সবাই বলা বলি করছে জাব্বারের জন্য। বরটি সুন্দর দেখ, সবার মুখে হাসি। হোসেন গাড়ি ডাকিয়ে চলেছে। কারুর মনে নেই কার মাথায় টুপি আছে। মেয়েরা কেউ গাড়ি গুনছে, কেউ জাব্বারকে দেখছে। গাড়ি থামলো বিয়ে বাড়িতে। গ্রামের লোক গাড়ির টুঁর নামানোর আগেই জাব্বারকে কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ফিতে কাটার আসরে, জাব্বার সমানে বলে যাচ্ছে বর আমি নয় গো, হোসেন তুমাদের বর। কেউ কান দেয় না জব্বারের কথায়। হৈচৈ করে সালিরা বলে চলেছে, কুড়ি টাকা লাগবে তবেই ফিতে তাটতে দুবো, জাব্বার সমানে বলে, ‘আমি লয় গো, হোসেন’
ওদিকে হোসেন অপেক্ষা করছে গাড়িতে বসে, কখন তাকে নিয়ে যাবে। বিয়ের আসরে। জব্বার না থাকতে পেরে চিয়ার থেকে লাফ মেরে ছুটে হোসেনের কাছে পৌছায় ও মাথা থেকে টুপি খুলে হোসেনের মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলে, ‘তুর সাধারন বুদ্ধি নাই, বিয়ের তাড়সে সেটাও হারিয়েছিস?’ কুনে পক্ষ ফের নিতে আসে জাব্বারকে, কিন্তু এসে দেখলো জাব্বার নয়, হোসেনই তাদের বর। জব্বার গাড়ির টুঁড়ে পাচন হাতে বসে আছে দুরের আকাশে তাকিয়ে গান গেয়ে যায়,
এ বছরে যদি কেউ বিয়ে করতে চাও
আট আনাতে প্রেম মাদুলি কিনে নিয়ে যাও।
হেই পা-পা-পা গোলে গোলে, গোলে গোলে, হেই ডাইনে-ডাইনে-ডাইনে।

Comments

Popular posts from this blog

আলী হোসেনের ছোটগল্প। এক এক্কে এক।

এক এক্কে এক : ছোট্ট বেলা নামতা পড়ার সময় এভাবেই শুরু করত মান্তু। তখন জানতো না কি এর মানে, কেনই বা পড়তে হয়। মা বলতেন, নামতা হল অঙ্কের মাথা। কিম্বা মেরুদণ্ডও বলতে পারিস। এটা ঠিকঠাক না শিখলে অঙ্ক মেলে না। যখন প্রাথমিক স্কুল ছেড়ে মাধ্যমিকে পৌছেছে, তখন মায়ের কথার মানে বুঝেছে মান্তু। কিন্তু পরিণত বয়সে এসে, আজ বুঝেছে এর অন্য মানে। এটা না জানলে, জীবনের মানেটাই পালটে যায়। মিলতে চায় না জীবনের অঙ্কটাও। মান্তু তখন ক্লাস এইটে। হঠাৎই দুঃসংবাদটা এলো। ক্লাসে সেলাই দিদিমনি, ফ্রেঞ্চনটের গীট ধরে আটকানোর চেষ্টা করছেন। বোঝাচ্ছেন, কিভাবে একে কব্জা করতে হয়। মান্তু কিছুতেই এই গিঁটকে কব্জা করতে পারছেনা। মাথার ওপর বোঁবোঁ করে ঘুরছে পাখা, অথচ ঘামের স্রোতে ভাঁটার টান নেই মোটেও। বাইরের বাতাসে উত্তাপের পারদ নিশ্চয়ই লু-লেবেল ছাড়িয়েছে। বাতাসের শুষ্ক বুকে তরঙ্গ তুলে সে ছুটে চলেছে শরীর জুড়াতে আন্য কোথাও, অন্য কোনখানে। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে চাঁদনি থেকে দোকানের মাল নিয়ে ফিরছিল ফারহাদ। হঠাৎই চরকির মত ঘুরে গেল মাথাটা। পিচ-গলা রাস্তায় আছড়ে পড়লো মস্ত শরীর। পথ-চলতি নজর চকিতে ঘুরে এল ফারহাদের দিকে। কে বলে কলকাতার হৃদয়ে উষ্ণতার অভা

শুভ্রা সাহার ছোটগল্প। লকডাউন।

গল্পকারের কন্ঠে গল্প পাঠ। গল্পের নাম : লক ডাউনের গল্প গল্পকারের কন্ঠে গল্প পাঠ। গল্পের নাম : লক ডাউন গল্পকারের কন্ঠে গল্প পাঠ। গল্পের নাম : লক ডাউনের গল্প আলোচিতা এখন আর আগের মতো বোর হয় না। ঘরে বসেই ছোট বোন সঞ্চিতাকে নিয়ে অনলাইনে গান, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে সময় কাটিয়ে দেয়। লকডাউন-এ পড়ে কি যে নাজেহাল অবস্থা সকলের! মাত্র কয়েকদিন আগে, দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরেছে সে। তখন তো ওর আসার কথাই ছিল না। হঠাৎ বাবার হার্ট অ্যাটাক হওয়াতেই আসতে হলো। আলোচিতা অর্থাৎ আলো। আর সঞ্চয়িতা অর্থাৎ সঞ্চিতা। ওরা দু'বোন। বাবা বিরাজবাবু স্কুলের শিক্ষক। মা রূপালি দেবী গৃহিণী। আলো দিল্লিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেছে গতবছর। সঞ্চিতা দ্বাদশ শ্রেণীতে। শিক্ষকতা করার সুবাদে আলোর বাবা বিরাজ বাবুর এলাকায় যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। ওদের এলাকায় হিন্দু মুসলিমের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। বিরাজ বাবুর অনেক মুসলিম ছাত্রও আছে, যারা প্রায়ই ওনার কাছে আসে। বিভিন্ন মতামতের জন্য। বিরাজবাবু বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন। সুনাম

সুদীপ্ত ভাস্কর দত্তের ছোটগল্প। ২০২১ : করোনার পরে।

audio testing গল্পকারের কণ্ঠে গল্প পাঠ  ২০২১ : করোনার পরে নদীর জলটা এত টলটলে, পরিষ্কার আগে দেখিনি কোনদিন! পাড়ে বসে একটা মুগ্ধতা নিয়ে স্বগতোক্তি করল অরুণ। বসন্তের আরম্ভে এই মৃদুমন্দ বাতাসটা প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছিল।। পড়ন্ত বিকেলে নির্জন নদীর তীরে, গাছের পাতার আড়াল থেকে একটা বউ কথা কও মাঝে মাঝে ডেকে উঠছিল। করোনা মহামারী রোধের চেষ্টায় সারা পৃথিবী জুড়ে যে লক ডাউন চলেছিল, তার ফলেই প্রকৃতি এখন দূষণমুক্ত, নির্মল।