Skip to main content

Posts

আলী হোসেন

দ্বিতীয় পিতা সকাল বেলা উঠেই চোখ দু’টো ডলতে থাকে মিরাজ। দুই হাতের মুষ্টি দু ’ চোখের পল্লবের উপর রেখে কব্জির মোচড়ে ডলা যা্রে বলে। বিরামহীনভাবে। মুহূর্তেই অক্ষিগোলক দুটো লাল হয়ে ওঠে, যেন জবাফুল। সঙ্গে ফুঁপিয়ে কান্না। আজ সে কোন মতে মাঠে যাবে না। গরু চরাতে ওর মোটেও ভালো লাগে না। ওর ইচ্ছা, বড় হয়ে স্কুল মাস্টার হবে। সেজন্যে যে অনেক লেখাপড়া শিখতে হবে! অথচ মা, তাকে গরু নিয়ে মাঠে পাঠাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ভারি হয়ে আসে। মনের কষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। বুকের ভেতরের চাপটা বাড়তে থাকে ক্রমশঃ। বাড়তে বাড়তে এক সময় কষ্টের মেঘ আষাঢ়ে বৃষ্টির মত কান্না হয়ে ভেঙে পড়ে। খুব করে কাঁদতে পারলেই যে বুকটা আবার মেঘমুক্ত আকাশের মত হাল্কা হয়ে যায়, কিছু সময় গলা ছেড়ে কাঁদার পর মিরাজ তা বেশ অনুধাবন করে।

তৈয়েব হোসেন

গাড়োয়ান দুপুরের খাবার পর রোজকার মত আজও এসেছে টি.ভি দেখতে। এটা তার অভ্যাস। টি.ভি না দেখলে দুটো দুখের সুখের গল্প করে বাড়ি যায় নুরমানের মা, তুমাদের টেলিভিসেন টো লাগিন দাউ কেনে গো মুসু। জিমি উত্তর দিল, কারেন নাই। নুরমানের মা বলে আ-বাছা তুদের কারেন-ই থাকে না, না থাউক গো, তুমার সাসুড়ি কুথা গেলো মেনোকা? জিমির পাঁচ বছর বয়স, কথা বলে অনর্গল। উত্তর না দিয়ে থাকতে পারে না, গল্প করবে তো? নুরমানের মা বলে, তু চুপ কর তো বাপু, ছুটু ছেলে লয় আর কথাই কথাই উত্তর দেই। বলেই পিঁড়ের কোন থেকে একটা তালাই নিয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের মনে বলতে লাগলো, অনেক দিন হয়ে গেলো লুলুনির কোনো খবর পাই নি, জানি না বাছা আমার কেমুন আছে, কে জানে? এই বলে চুপ রইলো, এমন সময় এসমসারা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে আমাদের বাড়িতে এসে বললো – ই আবার কে লো, ঘুমাইছিস না আল্লার সাতে গল্প করছিস। নুরমানের মা আস্তে আস্তে উঠে বললো, না বুন, হোসেনের বিয়ের লোক আলছিল, আমরাও দেখতে গেলছিলাম, পাকা কথা হঁয়ে গেল।

নয়ারুণ ভট্টাচার্য্য

রেবন্তর স্ববধবিলাস ‘No one ever lacks a good reason for suicide’         - Cesare Pavese (1908-50) কাল এক দীর্ঘ, দীর্ঘ রাত্রিব্যাপী পরিক্রমায় গৃহত্যাগ করিব। পরিক্রমার অন্তে দেখিব তরঙ্গবিক্ষুব্ধ এক অপার জলধি। মৃত্যু কী এমনই দেখিতে? ভাবিলেও রোমাঞ্চকণ্টকিত

মুর্শিদ এ এম

ফুরিয়ে না-যাওয়া মানুষটা এরপর আমাদের পরম প্রতিভাবান চাচার কথা বলি। বলতে হয় চাচা, কিন্তু বয়েস আমাদের চেয়ে কিঞ্চিৎ ভারী। আমি একসময় এই চাচাকে সিগারেট অফার করেছিলাম; সে অনেক দিনের কথা, যখন আমরা নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর জন্যে ইন্সিওরেন্স কোম্পানির মতো দেখতে এক কোম্পানিতে জয়েন করেছিলাম। চাচা সিগারেট সেদিন নেয়নি, নিত না, আজও কোনো নেশা নেই।

আয়েশা খাতুন

অনাদি চরণ       আজ ভোরটা একটু কালচে এবং ইসৎ লালচে হয়ে জন্মাল। পাখিদের চোখ বলে দেয় সূর্যটা বুঝি কাছে চলে এল। গাছের ডালে পাতার সঙ্গে ঘুমায়। কিন্তু শেষ রাতের অংশটা পাখিগুলো ক্ষুধাময় হয়ে ওঠে। ডানার মাংসপেশি হালকা ফুলতে থাকে, ঘাড়ের রোয়াগুলো জাগতে থাকে। পাখিটা তখনও ঘুমায়। যতক্ষণ না জাগে ততকক্ষণ বরং একটু অন্য কথা বলে নেওয়া যাক।