Skip to main content

Posts

আলী হোসেনের ছোটগল্প। খালি চেয়ার।

খালি চেয়ার : এই আছে এই নেই। সংসারের অমোঘ নিয়মে অহরহই ঘটে এমন ঘটনা। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটলো। এই তো, এই হল আমার চেয়ার। আমি মানে নিখিলেশ সাধু। আর-সকলের নিখিল। আমার চেয়ারটা যে ফাঁকাই পড়ে আছে দেখছি! কেউ কি বসে না এখানে? কেন? আমি কি ওদের কাছে অচ্ছুৎ হয়ে গেলাম? না না, এমন ভাবতে পারে, মনে হয়নি তো কখনও! আয়তাকার তিনটি টেবিল লম্বালম্বি করে বসানো। দৈঘ্য বরাবর দু’পাশে পরপর চেয়ার পাতা। সেখানেই সবাই বসে। প্রস্থ বরাবর পুবদিকে আমি, আর আমার উল্টোদিকে সুমন। আমার ডানদিকে দৈর্ঘ্য বরাবর বসে সীমা। দারুন সেজেগুজে অফিসে আসে আজকাল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় নাকি খুবই সাদামাটা ছিল ও, আর পাঁচটা মেয়ের মতই। বয়স চল্লিশের কোঠা যখন ছুঁই-ছুঁই, সাজগোজের বহরটা কবে কবে বেড়ে গেল। উগ্র না হলেও নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে বেশ সচেতন। আমি জানি, এরা সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। বিশেষ করে সীমা। হতে পারে সেটা আমার পেটরোগা দুর্বল শরীরের জন্য। হতে পারে মেয়েদের সহজাত করুণাশ্রিত আবেগই তার কারণ। আমি ভাবি, ব্যাক্তি-কেন্দ্রিক নগরজীবনে সেটাই কি কম? ও-ও-ই ওই-যে দক্ষিণ পাশে শর্ট হাইটের গাট্টাগোট্টা চেহারার মানুষটা, ওর নাম প্রেম নাথ। মজা করে সবাই বলে, ম

রাজার জন্ম। সুজন ভট্টাচার্য-এর ছোটগল্প।

সুজন ভট্টাচার্য - হুম! নিতাই, চলবে। নকুল মাস্টার ঘাড় নেড়ে বলেন। চেহারাটা মানানসই; বাকিটা আমি পড়িয়ে নেব। আক্রমপুর বাজার সমিতির উদ্যোগে জন্মাষ্টমীর রাতে বাজারের পাশের মাঠে হবে যাত্রাপালা ‘কুরুক্ষেত্র’। এ বছরই প্রথম। ফলে বাজারের পাকা দোকান আর হাটচালার সকলেরই প্রবল উৎসাহ। মাসদুয়েক আগে সারের দোকানের নিতাইদাই প্ল্যানটা বাৎলায়। দত্তপুকুরে সম্বুন্ধির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এমন এক এলাহি ব্যাপার দেখে তারও মগজে খেলে যায়, ওরা পারলে আমরাও পারব না কেন! ব্যাস! খুঁজেপেতে বড়বড়িয়ার নকুল মাস্টারকেও যোগাড় করে ফেলা হল। সে নাকি এককালে অনেক পালা করেছে। সেই হল মাস্টার; বাকিদের তালিম দিয়ে শিখিয়ে-পড়িয়ে নেবে। এমনিতে গদাধরের যাত্রা করার কোন ইচ্ছে ছিল না। সবজির দোকান চালায় বলে অনেক ভোরেই ওকে উঠতে হয়। রাতজেগে মহলা দিয়ে ভোরে ওঠা খুব কষ্টকর। তাই ও আর ঐদিক মাড়ায় নি। কিন্তু এক রোববার নকুল মাস্টারকে নিয়ে নিতাইদা ওর চালায় এসে হাজির। নকুল মাস্টার ওকে যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে, স্পষ্ট বুঝতে পারে গদাধর। ব্যাপারটা কি! - অ্যাই গদা, ইদিকে আয়। নিতাইদা হাঁক পাড়ে। হাজার হলেও পয়সাওলা লোক; তারপর বয়েসেও অনেক

আলী হোসেনের ছোটগল্প। এক এক্কে এক।

এক এক্কে এক : ছোট্ট বেলা নামতা পড়ার সময় এভাবেই শুরু করত মান্তু। তখন জানতো না কি এর মানে, কেনই বা পড়তে হয়। মা বলতেন, নামতা হল অঙ্কের মাথা। কিম্বা মেরুদণ্ডও বলতে পারিস। এটা ঠিকঠাক না শিখলে অঙ্ক মেলে না। যখন প্রাথমিক স্কুল ছেড়ে মাধ্যমিকে পৌছেছে, তখন মায়ের কথার মানে বুঝেছে মান্তু। কিন্তু পরিণত বয়সে এসে, আজ বুঝেছে এর অন্য মানে। এটা না জানলে, জীবনের মানেটাই পালটে যায়। মিলতে চায় না জীবনের অঙ্কটাও। মান্তু তখন ক্লাস এইটে। হঠাৎই দুঃসংবাদটা এলো। ক্লাসে সেলাই দিদিমনি, ফ্রেঞ্চনটের গীট ধরে আটকানোর চেষ্টা করছেন। বোঝাচ্ছেন, কিভাবে একে কব্জা করতে হয়। মান্তু কিছুতেই এই গিঁটকে কব্জা করতে পারছেনা। মাথার ওপর বোঁবোঁ করে ঘুরছে পাখা, অথচ ঘামের স্রোতে ভাঁটার টান নেই মোটেও। বাইরের বাতাসে উত্তাপের পারদ নিশ্চয়ই লু-লেবেল ছাড়িয়েছে। বাতাসের শুষ্ক বুকে তরঙ্গ তুলে সে ছুটে চলেছে শরীর জুড়াতে আন্য কোথাও, অন্য কোনখানে। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে চাঁদনি থেকে দোকানের মাল নিয়ে ফিরছিল ফারহাদ। হঠাৎই চরকির মত ঘুরে গেল মাথাটা। পিচ-গলা রাস্তায় আছড়ে পড়লো মস্ত শরীর। পথ-চলতি নজর চকিতে ঘুরে এল ফারহাদের দিকে। কে বলে কলকাতার হৃদয়ে উষ্ণতার অভা

উজান-কথা। আয়েশা খাতুনের ছোটগল্প।

উজান-কথা মনের ভিতরের একটা জানালা খুলে দিয়েছে নীরালি, নামের বৃতান্ত নাইবা জানলে তোমরা শুধু এইটুকু জেনো যে তার নাম নীরালি, মেয়ে ছাড়া কাকে নিয়েই বা কবিতা আর কাকে নিয়েই বা গান গল্প বলো! বড়ো লাচার বাবো, ইঞ গালমারা ক্যা শুনবে ? ইয়া তো লিতকার গালমারা, এই তো ধর ক্যানে চয়ত মাস্যের র‍্যোদ বটে গো মাথার অপরে বারটা চাঁন্দুবুঙ্গা মাথাটকে ফাটিন্দিচ্ছে র‍্যোদে, মাটিটর অপরে ট্যাংট তো রেখায় যায় না খো, কেন্তনা সি কুন ছুটু থেকে গোগোর তি ধরে আগুনের অপরে হ্যাঁটে হ্যাঁটে পায়ের তুলাটতে তো ঘুড়ার পারা লুহার ল্যাল পিন্দে লিয়েছি, মাটিট ক্যামুন লিজের হুয়ে যেলছে দ্যাখ আপনি থেকেই। তো কুথা যাব্বোঃ কুন ব্যাগে যাব্বোঃ গো! বাবোকুড়া কুন ব্যাগে যাব্বোঃ?

সৌমেন বন্দোপাধ্যায়

সেতুবন্ধন শুরু আর শেষ দৃশ্য অনেকটা একইরকম। অবশ্য দৃশ্যান্তর নানা রঙে ঝলমলে। এখনোও উজ্জ্বল।   সময় কাল ১৯৯০ সাল। আমি তখন দশ বছরের। পঞ্চম শ্রেণী। নতুন স্কুল। নতুন নতুন বন্ধু। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও পরে পরে ক্লাসের সবার সাথে ভাব হয়ে গেল। স্কুলে আসা-যাওয়া এভাবেই ছয় মাস কেটে গেল। অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল। আমি ক্লাসের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রইলাম, তবে বাংলায় সবচেয়ে বেশি নম্বর আমি পেয়েছিলাম দেখে ক্লাসের ফাস্ট বয় গৌতম কয়াল আমাকে ডেকে বলল, ‘ব্যানার্জী, বাংলায় তুমি আমার থেকে ২০ নম্বর বেশি পেয়ে আমাকে চমকে দিয়েছো। আজ থেকে তুমি আমার বেষ্ট ফ্রেণ্ড।’ সেই থেকে আমি ওকে গৌতম আর ও আমাকে ব্যানার্জী ডাকতাম।

তাপস দাস

চিত্ত দর্পণ গ্রাম বাংলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভূপতিবাবুদের আড্ডাখানা আজও আছে। সবুজে ঘেরা মেঠো পথের পাশে পাশে মাচার মজলিস যুগ যুগ ধরে বিরাজমান। গ্রীষ্মের দাবদাহ, মাটির সোঁদা গন্ধে ভরা দুরন্ত বর্ষণবেগ,উৎসব মুখরিত শরতের আওয়াজ,শিশিরে ভেজা হেমন্ত, শীতের কামড়,বসন্তের মদন বাতাস সবকিছুর মধ্যে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকে এই সব আড্ডাখানা গুলি। পাড়ায় থাকেন অমিয় ডাক্তার। তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিধিও। তাঁর সুদৃশ্য অট্টালিকার এক পাশে সুউচ্চ বট গাছ দাঁড়িয়ে প্রাচীনতার গৌরব বহন করে। গ্রীষ্মের দাবদাহকে পরাজিত করে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করার জন্য, কিছুটা মোসাহেবি করার জন্য আশেপাশের কয়েকটি পাড়া থেকে কেষ্ট বিষ্টু থেকে হরিদাস পালদের আনাগোনা চলতে থাকে।

মহ. আসফাক আলম

তোর নামটা রায়গঞ্জ সারদা বিদ্যামন্দিরের মাঠে আতীব, তার বাবা সুজা ও মা রোমা সকাল সাড়ে দশটা থেকে অপেক্ষা করে বসে আছে। পরীক্ষার সময় দেওয়া হয়েছিল সকাল এগারোটা। চল্লিশ কিমি দূর থেকে আসতে হয় বলে সকাল সকাল বের হয়েছিল তারা । সেরকম ভাবে মুখে কিছু দেওয়া হয়নি। তাই বাস থেকে নেমেই শ্রীদুর্গা রেস্টুরেন্টে ঢোকে তারা । গরম গরম লুচি ভাজা হচ্ছিল সেখানে । তা খেয়ে সোজা চলে আসে স্কুলে । সেই থেকে বসে আছে। এখন বেলা একটা বাজে। শুধু বসে আছে তা বলা যাবে না। আতীব তাদের শান্তিতে কি বসে থাকতে দেওয়ার পাত্র ? দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো মাঠ। দোলনা, পিছলে পড়ার জিরাফ সিঁড়ি, ঘুরন্ত চেয়ার ইত্যাদি নিয়ে পুরো ব্যস্ত রয়েছে। ব্যস্ত করে রেখেছে তার বাবা মাকে । তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সুজা । কিন্তু তার চিন্তা কেবল আতীবকে নিয়ে – সে যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ে! পরীক্ষকের সামনে যদি কিছু না বলতে পারে! তাহলে কী হবে? শেষের দিকে ডাক আসে আতীবের। তখন বেলা দু’টো। মাইকে হাঁক দেয়, আ তীব, পিতা সুজা, শ্রেণি - উদয়। নয় নম্বর কক্ষে পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ’য়ের জন্য ডাকা হচ্ছে।