Skip to main content

Posts

দেবাশিস দেব

ইচ্ছে দেবাশিস দেব       দুপুরবেলা বারান্দায় বসে ঝিমোচ্ছিল হরিদাসী। ঠা ঠা রোদ বাইরে, ঘরের ভেতরটাও তাতিয়ে আছে। বারান্দায়  মাঝেমাঝে একটু হাওয়া দিচ্ছিল, উঠোনের জবাগাছটার পাতা নড়ছিল ইতিউতি। দেয়ালে হেলান দিয়ে হরিদাসী মাথামুণ্ডু সব ভাবছিল। গোপাল কাল সকালে আড়তে গিয়েছে মাল আনতে, বিকেলে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ফেরেনি, হয়ত কোন কাজে আটকে গেছে। মাঝেমাঝে এমন যে হয়না তা নয়, কিন্তু হরিদাসী চিন্তা এড়াতে পারেনা। মায়ের মন, সর্বক্ষণ খারাপ চিন্তাই আগে আসে। কখন ফিরবে কে জানে? বাসের সময় জানা নেই হরিদাসীর। অবশ্য দরকারও পড়েনা বিশেষ। এই গ্রামেই জীবনটা প্রায় কেটে গেল। ষাট বছর হতে চলেছে বয়স। হরিদাসী ভাবে, কবে বউ হয়ে এসেছিল এই বাড়িতে, গোবিন্দর হাত ধরে । সেও অনেকদিন , বছর চল্লিশেক তো কম করে। গোবিন্দ গান  গাইত, কীর্তন , পালা এইসব। ঘোষেদের বাড়িতে বছরে দুবার বাঁধা ছিল। এছাড়াও আশেপাশের গ্রামগঞ্জ থেকে ডাক আসত। মুদির দোকানটা নামমাত্র , ব্যবসায় কোন দিনই সেরকম মন ছিল না গোবিন্দর। সন্ধে হলেই পুরনো হারমনিয়ামটা নিয়ে বসে যেত। রাধার মানভঞ্জন , আরও কতকি? হরিদাসী মুখ্যু মেয়েমানুষ, লেখাপড়া শেখেনি

আলী হোসেন

কর্তব্য রাত হয়েছে অনেক। তবু চোখের পাতা দু’টো এক হচ্ছে না। বুকের ভেতরটাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সুদূর , দূর কিংবা নিকট - কোনো অতীতেই এমনটা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না পরানের। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি থেকে যেদিন ভি. আর. এস. নিতে এক রকম বাধ্য হয়েছিলেন, তখনও এমন হয় নি।

সংহতি মজুমদার

অজানা কারণ প্রণববাবু বড়ই ভালমানুষ। একমাথা কোঁকড়া চুল ,  লম্বা চওড়া স্বাস্থ্য ,  চোখ দুটি নিস্তেজ। দুর্গাপুরের বাসিন্দা তিনি। তাঁর বাড়িতে স্ত্রী ,  এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি গলসির একটি স্কুলের শিক্ষক। বাড়ি থেকে তাঁর স্কুলে যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেন। ছ ’ টায় বেরোন আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল পাঁচটা। ফিরেই টিউসন।

আলী হোসেন

দ্বিতীয় পিতা সকাল বেলা উঠেই চোখ দু’টো ডলতে থাকে মিরাজ। দুই হাতের মুষ্টি দু ’ চোখের পল্লবের উপর রেখে কব্জির মোচড়ে ডলা যা্রে বলে। বিরামহীনভাবে। মুহূর্তেই অক্ষিগোলক দুটো লাল হয়ে ওঠে, যেন জবাফুল। সঙ্গে ফুঁপিয়ে কান্না। আজ সে কোন মতে মাঠে যাবে না। গরু চরাতে ওর মোটেও ভালো লাগে না। ওর ইচ্ছা, বড় হয়ে স্কুল মাস্টার হবে। সেজন্যে যে অনেক লেখাপড়া শিখতে হবে! অথচ মা, তাকে গরু নিয়ে মাঠে পাঠাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ভারি হয়ে আসে। মনের কষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। বুকের ভেতরের চাপটা বাড়তে থাকে ক্রমশঃ। বাড়তে বাড়তে এক সময় কষ্টের মেঘ আষাঢ়ে বৃষ্টির মত কান্না হয়ে ভেঙে পড়ে। খুব করে কাঁদতে পারলেই যে বুকটা আবার মেঘমুক্ত আকাশের মত হাল্কা হয়ে যায়, কিছু সময় গলা ছেড়ে কাঁদার পর মিরাজ তা বেশ অনুধাবন করে।

তৈয়েব হোসেন

গাড়োয়ান দুপুরের খাবার পর রোজকার মত আজও এসেছে টি.ভি দেখতে। এটা তার অভ্যাস। টি.ভি না দেখলে দুটো দুখের সুখের গল্প করে বাড়ি যায় নুরমানের মা, তুমাদের টেলিভিসেন টো লাগিন দাউ কেনে গো মুসু। জিমি উত্তর দিল, কারেন নাই। নুরমানের মা বলে আ-বাছা তুদের কারেন-ই থাকে না, না থাউক গো, তুমার সাসুড়ি কুথা গেলো মেনোকা? জিমির পাঁচ বছর বয়স, কথা বলে অনর্গল। উত্তর না দিয়ে থাকতে পারে না, গল্প করবে তো? নুরমানের মা বলে, তু চুপ কর তো বাপু, ছুটু ছেলে লয় আর কথাই কথাই উত্তর দেই। বলেই পিঁড়ের কোন থেকে একটা তালাই নিয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের মনে বলতে লাগলো, অনেক দিন হয়ে গেলো লুলুনির কোনো খবর পাই নি, জানি না বাছা আমার কেমুন আছে, কে জানে? এই বলে চুপ রইলো, এমন সময় এসমসারা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে আমাদের বাড়িতে এসে বললো – ই আবার কে লো, ঘুমাইছিস না আল্লার সাতে গল্প করছিস। নুরমানের মা আস্তে আস্তে উঠে বললো, না বুন, হোসেনের বিয়ের লোক আলছিল, আমরাও দেখতে গেলছিলাম, পাকা কথা হঁয়ে গেল।

নয়ারুণ ভট্টাচার্য্য

রেবন্তর স্ববধবিলাস ‘No one ever lacks a good reason for suicide’         - Cesare Pavese (1908-50) কাল এক দীর্ঘ, দীর্ঘ রাত্রিব্যাপী পরিক্রমায় গৃহত্যাগ করিব। পরিক্রমার অন্তে দেখিব তরঙ্গবিক্ষুব্ধ এক অপার জলধি। মৃত্যু কী এমনই দেখিতে? ভাবিলেও রোমাঞ্চকণ্টকিত

মুর্শিদ এ এম

ফুরিয়ে না-যাওয়া মানুষটা এরপর আমাদের পরম প্রতিভাবান চাচার কথা বলি। বলতে হয় চাচা, কিন্তু বয়েস আমাদের চেয়ে কিঞ্চিৎ ভারী। আমি একসময় এই চাচাকে সিগারেট অফার করেছিলাম; সে অনেক দিনের কথা, যখন আমরা নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর জন্যে ইন্সিওরেন্স কোম্পানির মতো দেখতে এক কোম্পানিতে জয়েন করেছিলাম। চাচা সিগারেট সেদিন নেয়নি, নিত না, আজও কোনো নেশা নেই।