Skip to main content

Posts

মুর্শিদ এ এম - এর গল্প। ঠুনকো।

পুরো গল্প পড়তে গল্পকারের নাম -এর ওপর ক্লিক করুন ।। হোম পেজ-এ যেত এখানে ক্লিক করুন audio testing গল্পকারের কণ্ঠে গল্প পাঠ।  ঠুনকো একের পর এক প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে একেবারে দক্ষিণে, মনে হচ্ছিল একটু গেলেই সাগর এগিয়ে আসবে, একলা ত্যাজ্যপুত্রের মতো দাঁড়িয়ে থাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটা দেখতে পেল ইয়াসিন। সাউথ ইন্ডিয়া যাবার প্রায় সব ট্রেন এই দিকের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ে। বন্যার কারণে কয়েকটি ট্রেন বাতিল হওয়ার পর কদিন হল খুলেছে। একাই এতটা পথ লটবহর টেনে গলদ্ঘর্ম হয়ে কামরায় ঢুকে নিঃশ্বাস ফেলল সে। এখনও এ সি চলেনি। চললে অসুবিধেই হত, হঠাৎ লেগে যেত ঠান্ডা। নিজের সিট খুঁজে মালপত্র রেখে চোখ-মুখ ধুয়ে, টুপিটা খুলে আবার পরে নিয়ে, ঘন সুবিন্যস্ত দাড়ি ভেজা হাতে মুছে খানিকটা জল খেয়ে স্বস্তি পেল যেন। একটা কালো ঢাউস ব্যাগকে কিছুতেই কব্জা করতে না-পেরে পায়ের কাছেই রেখে দিল ইয়াসিন।

সুদীপ্ত ভাস্কর দত্তের ছোটগল্প। ২০২১ : করোনার পরে।

audio testing গল্পকারের কণ্ঠে গল্প পাঠ  ২০২১ : করোনার পরে নদীর জলটা এত টলটলে, পরিষ্কার আগে দেখিনি কোনদিন! পাড়ে বসে একটা মুগ্ধতা নিয়ে স্বগতোক্তি করল অরুণ। বসন্তের আরম্ভে এই মৃদুমন্দ বাতাসটা প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছিল।। পড়ন্ত বিকেলে নির্জন নদীর তীরে, গাছের পাতার আড়াল থেকে একটা বউ কথা কও মাঝে মাঝে ডেকে উঠছিল। করোনা মহামারী রোধের চেষ্টায় সারা পৃথিবী জুড়ে যে লক ডাউন চলেছিল, তার ফলেই প্রকৃতি এখন দূষণমুক্ত, নির্মল।

নীহার চক্রবর্তীর গল্প । সুধাকরী।

সুধাকরী অনেক রাতে কে একজন কবরস্থানের দিকে  যায়। দূর থেকে মনে হয়, কোন মহিলা হবে। কিন্তু কে? কে সে? এ নিয়ে দুবরাজপুরে শোরগোল পড়ে গেলো খুব। সবার আগ্রহ তাকে ধরার। কেউ-কেউ আবার ভয়ে-ভয়ে বলে, জিন-পরী হতে পারে। অতএব এর মধ্যে যাওয়া ঠিক হবে না।

শুভ্রা সাহার ছোটগল্প। লকডাউন।

গল্পকারের কন্ঠে গল্প পাঠ। গল্পের নাম : লক ডাউনের গল্প গল্পকারের কন্ঠে গল্প পাঠ। গল্পের নাম : লক ডাউন গল্পকারের কন্ঠে গল্প পাঠ। গল্পের নাম : লক ডাউনের গল্প আলোচিতা এখন আর আগের মতো বোর হয় না। ঘরে বসেই ছোট বোন সঞ্চিতাকে নিয়ে অনলাইনে গান, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে সময় কাটিয়ে দেয়। লকডাউন-এ পড়ে কি যে নাজেহাল অবস্থা সকলের! মাত্র কয়েকদিন আগে, দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরেছে সে। তখন তো ওর আসার কথাই ছিল না। হঠাৎ বাবার হার্ট অ্যাটাক হওয়াতেই আসতে হলো। আলোচিতা অর্থাৎ আলো। আর সঞ্চয়িতা অর্থাৎ সঞ্চিতা। ওরা দু'বোন। বাবা বিরাজবাবু স্কুলের শিক্ষক। মা রূপালি দেবী গৃহিণী। আলো দিল্লিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেছে গতবছর। সঞ্চিতা দ্বাদশ শ্রেণীতে। শিক্ষকতা করার সুবাদে আলোর বাবা বিরাজ বাবুর এলাকায় যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। ওদের এলাকায় হিন্দু মুসলিমের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। বিরাজ বাবুর অনেক মুসলিম ছাত্রও আছে, যারা প্রায়ই ওনার কাছে আসে। বিভিন্ন মতামতের জন্য। বিরাজবাবু বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন। সুনাম ...

আলী হোসেনের ছোটগল্প। খালি চেয়ার।

খালি চেয়ার : এই আছে এই নেই। সংসারের অমোঘ নিয়মে অহরহই ঘটে এমন ঘটনা। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটলো। এই তো, এই হল আমার চেয়ার। আমি মানে নিখিলেশ সাধু। আর-সকলের নিখিল। আমার চেয়ারটা যে ফাঁকাই পড়ে আছে দেখছি! কেউ কি বসে না এখানে? কেন? আমি কি ওদের কাছে অচ্ছুৎ হয়ে গেলাম? না না, এমন ভাবতে পারে, মনে হয়নি তো কখনও! আয়তাকার তিনটি টেবিল লম্বালম্বি করে বসানো। দৈঘ্য বরাবর দু’পাশে পরপর চেয়ার পাতা। সেখানেই সবাই বসে। প্রস্থ বরাবর পুবদিকে আমি, আর আমার উল্টোদিকে সুমন। আমার ডানদিকে দৈর্ঘ্য বরাবর বসে সীমা। দারুন সেজেগুজে অফিসে আসে আজকাল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় নাকি খুবই সাদামাটা ছিল ও, আর পাঁচটা মেয়ের মতই। বয়স চল্লিশের কোঠা যখন ছুঁই-ছুঁই, সাজগোজের বহরটা কবে কবে বেড়ে গেল। উগ্র না হলেও নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে বেশ সচেতন। আমি জানি, এরা সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। বিশেষ করে সীমা। হতে পারে সেটা আমার পেটরোগা দুর্বল শরীরের জন্য। হতে পারে মেয়েদের সহজাত করুণাশ্রিত আবেগই তার কারণ। আমি ভাবি, ব্যাক্তি-কেন্দ্রিক নগরজীবনে সেটাই কি কম? ও-ও-ই ওই-যে দক্ষিণ পাশে শর্ট হাইটের গাট্টাগোট্টা চেহারার মানুষটা, ওর নাম প্রেম নাথ। মজা করে সবাই বলে, ম...

রাজার জন্ম। সুজন ভট্টাচার্য-এর ছোটগল্প।

সুজন ভট্টাচার্য - হুম! নিতাই, চলবে। নকুল মাস্টার ঘাড় নেড়ে বলেন। চেহারাটা মানানসই; বাকিটা আমি পড়িয়ে নেব। আক্রমপুর বাজার সমিতির উদ্যোগে জন্মাষ্টমীর রাতে বাজারের পাশের মাঠে হবে যাত্রাপালা ‘কুরুক্ষেত্র’। এ বছরই প্রথম। ফলে বাজারের পাকা দোকান আর হাটচালার সকলেরই প্রবল উৎসাহ। মাসদুয়েক আগে সারের দোকানের নিতাইদাই প্ল্যানটা বাৎলায়। দত্তপুকুরে সম্বুন্ধির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এমন এক এলাহি ব্যাপার দেখে তারও মগজে খেলে যায়, ওরা পারলে আমরাও পারব না কেন! ব্যাস! খুঁজেপেতে বড়বড়িয়ার নকুল মাস্টারকেও যোগাড় করে ফেলা হল। সে নাকি এককালে অনেক পালা করেছে। সেই হল মাস্টার; বাকিদের তালিম দিয়ে শিখিয়ে-পড়িয়ে নেবে। এমনিতে গদাধরের যাত্রা করার কোন ইচ্ছে ছিল না। সবজির দোকান চালায় বলে অনেক ভোরেই ওকে উঠতে হয়। রাতজেগে মহলা দিয়ে ভোরে ওঠা খুব কষ্টকর। তাই ও আর ঐদিক মাড়ায় নি। কিন্তু এক রোববার নকুল মাস্টারকে নিয়ে নিতাইদা ওর চালায় এসে হাজির। নকুল মাস্টার ওকে যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে, স্পষ্ট বুঝতে পারে গদাধর। ব্যাপারটা কি! - অ্যাই গদা, ইদিকে আয়। নিতাইদা হাঁক পাড়ে। হাজার হলেও পয়সাওলা লোক; তারপর বয়েসেও অনেক...

আলী হোসেনের ছোটগল্প। এক এক্কে এক।

এক এক্কে এক : ছোট্ট বেলা নামতা পড়ার সময় এভাবেই শুরু করত মান্তু। তখন জানতো না কি এর মানে, কেনই বা পড়তে হয়। মা বলতেন, নামতা হল অঙ্কের মাথা। কিম্বা মেরুদণ্ডও বলতে পারিস। এটা ঠিকঠাক না শিখলে অঙ্ক মেলে না। যখন প্রাথমিক স্কুল ছেড়ে মাধ্যমিকে পৌছেছে, তখন মায়ের কথার মানে বুঝেছে মান্তু। কিন্তু পরিণত বয়সে এসে, আজ বুঝেছে এর অন্য মানে। এটা না জানলে, জীবনের মানেটাই পালটে যায়। মিলতে চায় না জীবনের অঙ্কটাও। মান্তু তখন ক্লাস এইটে। হঠাৎই দুঃসংবাদটা এলো। ক্লাসে সেলাই দিদিমনি, ফ্রেঞ্চনটের গীট ধরে আটকানোর চেষ্টা করছেন। বোঝাচ্ছেন, কিভাবে একে কব্জা করতে হয়। মান্তু কিছুতেই এই গিঁটকে কব্জা করতে পারছেনা। মাথার ওপর বোঁবোঁ করে ঘুরছে পাখা, অথচ ঘামের স্রোতে ভাঁটার টান নেই মোটেও। বাইরের বাতাসে উত্তাপের পারদ নিশ্চয়ই লু-লেবেল ছাড়িয়েছে। বাতাসের শুষ্ক বুকে তরঙ্গ তুলে সে ছুটে চলেছে শরীর জুড়াতে আন্য কোথাও, অন্য কোনখানে। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে চাঁদনি থেকে দোকানের মাল নিয়ে ফিরছিল ফারহাদ। হঠাৎই চরকির মত ঘুরে গেল মাথাটা। পিচ-গলা রাস্তায় আছড়ে পড়লো মস্ত শরীর। পথ-চলতি নজর চকিতে ঘুরে এল ফারহাদের দিকে। কে বলে কলকাতার হৃদয়ে উষ্ণতার অভা...

উজান-কথা। আয়েশা খাতুনের ছোটগল্প।

উজান-কথা মনের ভিতরের একটা জানালা খুলে দিয়েছে নীরালি, নামের বৃতান্ত নাইবা জানলে তোমরা শুধু এইটুকু জেনো যে তার নাম নীরালি, মেয়ে ছাড়া কাকে নিয়েই বা কবিতা আর কাকে নিয়েই বা গান গল্প বলো! বড়ো লাচার বাবো, ইঞ গালমারা ক্যা শুনবে ? ইয়া তো লিতকার গালমারা, এই তো ধর ক্যানে চয়ত মাস্যের র‍্যোদ বটে গো মাথার অপরে বারটা চাঁন্দুবুঙ্গা মাথাটকে ফাটিন্দিচ্ছে র‍্যোদে, মাটিটর অপরে ট্যাংট তো রেখায় যায় না খো, কেন্তনা সি কুন ছুটু থেকে গোগোর তি ধরে আগুনের অপরে হ্যাঁটে হ্যাঁটে পায়ের তুলাটতে তো ঘুড়ার পারা লুহার ল্যাল পিন্দে লিয়েছি, মাটিট ক্যামুন লিজের হুয়ে যেলছে দ্যাখ আপনি থেকেই। তো কুথা যাব্বোঃ কুন ব্যাগে যাব্বোঃ গো! বাবোকুড়া কুন ব্যাগে যাব্বোঃ?

সৌমেন বন্দোপাধ্যায়

সেতুবন্ধন শুরু আর শেষ দৃশ্য অনেকটা একইরকম। অবশ্য দৃশ্যান্তর নানা রঙে ঝলমলে। এখনোও উজ্জ্বল।   সময় কাল ১৯৯০ সাল। আমি তখন দশ বছরের। পঞ্চম শ্রেণী। নতুন স্কুল। নতুন নতুন বন্ধু। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও পরে পরে ক্লাসের সবার সাথে ভাব হয়ে গেল। স্কুলে আসা-যাওয়া এভাবেই ছয় মাস কেটে গেল। অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল। আমি ক্লাসের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রইলাম, তবে বাংলায় সবচেয়ে বেশি নম্বর আমি পেয়েছিলাম দেখে ক্লাসের ফাস্ট বয় গৌতম কয়াল আমাকে ডেকে বলল, ‘ব্যানার্জী, বাংলায় তুমি আমার থেকে ২০ নম্বর বেশি পেয়ে আমাকে চমকে দিয়েছো। আজ থেকে তুমি আমার বেষ্ট ফ্রেণ্ড।’ সেই থেকে আমি ওকে গৌতম আর ও আমাকে ব্যানার্জী ডাকতাম।

তাপস দাস

চিত্ত দর্পণ গ্রাম বাংলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভূপতিবাবুদের আড্ডাখানা আজও আছে। সবুজে ঘেরা মেঠো পথের পাশে পাশে মাচার মজলিস যুগ যুগ ধরে বিরাজমান। গ্রীষ্মের দাবদাহ, মাটির সোঁদা গন্ধে ভরা দুরন্ত বর্ষণবেগ,উৎসব মুখরিত শরতের আওয়াজ,শিশিরে ভেজা হেমন্ত, শীতের কামড়,বসন্তের মদন বাতাস সবকিছুর মধ্যে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকে এই সব আড্ডাখানা গুলি। পাড়ায় থাকেন অমিয় ডাক্তার। তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিধিও। তাঁর সুদৃশ্য অট্টালিকার এক পাশে সুউচ্চ বট গাছ দাঁড়িয়ে প্রাচীনতার গৌরব বহন করে। গ্রীষ্মের দাবদাহকে পরাজিত করে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করার জন্য, কিছুটা মোসাহেবি করার জন্য আশেপাশের কয়েকটি পাড়া থেকে কেষ্ট বিষ্টু থেকে হরিদাস পালদের আনাগোনা চলতে থাকে।

মহ. আসফাক আলম

তোর নামটা রায়গঞ্জ সারদা বিদ্যামন্দিরের মাঠে আতীব, তার বাবা সুজা ও মা রোমা সকাল সাড়ে দশটা থেকে অপেক্ষা করে বসে আছে। পরীক্ষার সময় দেওয়া হয়েছিল সকাল এগারোটা। চল্লিশ কিমি দূর থেকে আসতে হয় বলে সকাল সকাল বের হয়েছিল তারা । সেরকম ভাবে মুখে কিছু দেওয়া হয়নি। তাই বাস থেকে নেমেই শ্রীদুর্গা রেস্টুরেন্টে ঢোকে তারা । গরম গরম লুচি ভাজা হচ্ছিল সেখানে । তা খেয়ে সোজা চলে আসে স্কুলে । সেই থেকে বসে আছে। এখন বেলা একটা বাজে। শুধু বসে আছে তা বলা যাবে না। আতীব তাদের শান্তিতে কি বসে থাকতে দেওয়ার পাত্র ? দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো মাঠ। দোলনা, পিছলে পড়ার জিরাফ সিঁড়ি, ঘুরন্ত চেয়ার ইত্যাদি নিয়ে পুরো ব্যস্ত রয়েছে। ব্যস্ত করে রেখেছে তার বাবা মাকে । তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সুজা । কিন্তু তার চিন্তা কেবল আতীবকে নিয়ে – সে যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ে! পরীক্ষকের সামনে যদি কিছু না বলতে পারে! তাহলে কী হবে? শেষের দিকে ডাক আসে আতীবের। তখন বেলা দু’টো। মাইকে হাঁক দেয়, আ তীব, পিতা সুজা, শ্রেণি - উদয়। নয় নম্বর কক্ষে পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ’য়ের জন্য ডাকা হচ্ছে।

রাহুল মজুমদার

কবিতা দুর্যোধন সামন্তের বাড়ির বৈঠকখানায় বসে ভীষণ বিরক্ত লাগছিল পরমের । দুর্যোধনের চাকর তাকে বসিয়ে রেখে তার মনিবকে বাড়ির ভিতর খবর দিতে গেল । কিন্তু ফিরে আসবার আর নাম করে না. প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল, বসে রয়েছে পরম । এমনিতেই দুর্যোধনের বাড়িতে আসবার কোনো প্রয়োজনই ছিল না তার, আসতে হল ছাত্রছাত্রীদের মুখ চেয়ে । কলকাতা থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দুরের গৌরমোহন ভাদুড়ি মহাবিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক পরম অর্থাৎ পরমব্রত সেনগুপ্ত । থাকে কলকাতায়, ট্রেনে চেপে শিয়ালদহ থেকে মালতীপুর স্টেশন এসে নামে সে । তারপর সেখান থেকে ভ্যানরিক্সা ধরে তিন কিলোমিটার দুরের কলেজে যেতে হয় ।

মুর্শিদ এ এম

তেরো থেকে একুশে পতনজনিত জটিলতার বয়ান         গত চল্লিশ বছর ধরে তার কাছে থাকা চাবির গোছাটাকে যেমন চেনে বশির আলি, তেমন চেনে তালার একেকটা ছিদ্রকে। তালার ছিদ্রকে অবশ্য বশির আলি ছিদ্র বলে না। বলে — না, যা বলে ,তা ভদ্র সমাজে না উচ্চারণ করাই ভালো। করলে নিজেকে ডিক্লাসড করা যায় বলে মনে হলেও আদৌ তা সম্ভব হয় কি না সন্দেহ। তো বশির আলির এই চাবির গোছাই তার সম্বল। গোছার ভেতর নব্বই শতাংশ চাবিরই কোনো তালা নেই। অথবা থাকলেও কোনটার ভেতর কোনটা সেঁধোবে তা মনে করতে পারে না। কেবল খানতিনেক চাবি তার রোজকার ব্যবহারে লাগে। সকাল সন্ধে যে দোকানটা সে  চালায়, তার শাটারের জন্যে দুটো, আর ভেতরের গ্রিলের  জন্যে একটা। দোকানটার বিবরণ দেয়ার মতো কিছু নেই। কিচ্ছুই নেই। এই না-থাকাটাই তার প্রধান বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ এই দোকানটিকে রকমারি স্টোর্স নামে চিনলেও, ডাকে ঝকমারি স্টোর্স বলে। যখনই ক্রেতাসাধরণ কিছু কিনতে যান, তখনই বশির বলে দেয় — নেই।

অপু চক্রবর্তী

বিট্টূ ও তার আমের আঁটি প্রতিদিনের মতো আজ বিট্টু যখন গড়িয়ার তালতলায় চায়ের দোকানে কাজ করতে যাচ্ছিল তখন গনেশ ভবনের গেটের বাইরে একটা পাকা আম কুড়িয়ে পায়। বিট্টুদের বাদামতলার বাড়ির পাশে গনেশ ভবন, উচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হর জেঠুর নিজের বাড়ি। বাড়ির ভেতরে চারপাশে আম, জামরুল, কাঁঠাল, বাতাবি লেবুর গাছ। বিট্টু ভাবল গতকাল রাতের ঝড়বৃষ্টিতে হয় তো আমটা পড়েছে। বেশ কয়েকদিন যাবৎ আমগুলিতে পাক ধরেছে। বিট্টু তা লক্ষ্য করেছে। বিট্টু জানে হর জেঠু পাকা আম পাড়ে না, কোন এক ছুটির দিনে কোন গেছো লোককে গাছে উঠিয়ে আমগুলি পেড়ে নেয়। পাড়ার কোন ছেলের আম পাড়ার ক্ষমতা নেই, কেননা রাতে গনেশ ভবনের গাড়ি-বারান্দার নিচে বুদ্ধ দারোয়ান পাহারা দেয়। আর দিনের বেলা হর জেঠূ গাড়ি-বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পাঁচিলের ওপর চোখ রাখে। বিট্টু একবারও চেষ্টা করে নি, কারণ তার মা হর জেঠুর বাড়িতে দুবেলা বাসন মাজার কাজ করে। ইন্দু জেঠি সময়ে সময়ে বিট্টুকে ডেকে হাত ভর্তি ফল ও এটা সেটা দেয়। তাছাড়া তার মা প্রায় প্রতিদিনই গাছতলায় পড়ে থাকা পড়তি-ঝড়তি কাঁচা আম এনে বাড়িতে ডাল রান্না করে।

দেবাশিস দেব

ইচ্ছে দেবাশিস দেব       দুপুরবেলা বারান্দায় বসে ঝিমোচ্ছিল হরিদাসী। ঠা ঠা রোদ বাইরে, ঘরের ভেতরটাও তাতিয়ে আছে। বারান্দায়  মাঝেমাঝে একটু হাওয়া দিচ্ছিল, উঠোনের জবাগাছটার পাতা নড়ছিল ইতিউতি। দেয়ালে হেলান দিয়ে হরিদাসী মাথামুণ্ডু সব ভাবছিল। গোপাল কাল সকালে আড়তে গিয়েছে মাল আনতে, বিকেলে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ফেরেনি, হয়ত কোন কাজে আটকে গেছে। মাঝেমাঝে এমন যে হয়না তা নয়, কিন্তু হরিদাসী চিন্তা এড়াতে পারেনা। মায়ের মন, সর্বক্ষণ খারাপ চিন্তাই আগে আসে। কখন ফিরবে কে জানে? বাসের সময় জানা নেই হরিদাসীর। অবশ্য দরকারও পড়েনা বিশেষ। এই গ্রামেই জীবনটা প্রায় কেটে গেল। ষাট বছর হতে চলেছে বয়স। হরিদাসী ভাবে, কবে বউ হয়ে এসেছিল এই বাড়িতে, গোবিন্দর হাত ধরে । সেও অনেকদিন , বছর চল্লিশেক তো কম করে। গোবিন্দ গান  গাইত, কীর্তন , পালা এইসব। ঘোষেদের বাড়িতে বছরে দুবার বাঁধা ছিল। এছাড়াও আশেপাশের গ্রামগঞ্জ থেকে ডাক আসত। মুদির দোকানটা নামমাত্র , ব্যবসায় কোন দিনই সেরকম মন ছিল না গোবিন্দর। সন্ধে হলেই পুরনো হারমনিয়ামটা নিয়ে বসে যেত। রাধার মানভঞ্জন , আরও কতকি? হরিদাসী মুখ্যু মেয...

আলী হোসেন

কর্তব্য রাত হয়েছে অনেক। তবু চোখের পাতা দু’টো এক হচ্ছে না। বুকের ভেতরটাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সুদূর , দূর কিংবা নিকট - কোনো অতীতেই এমনটা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না পরানের। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি থেকে যেদিন ভি. আর. এস. নিতে এক রকম বাধ্য হয়েছিলেন, তখনও এমন হয় নি।

সংহতি মজুমদার

অজানা কারণ প্রণববাবু বড়ই ভালমানুষ। একমাথা কোঁকড়া চুল ,  লম্বা চওড়া স্বাস্থ্য ,  চোখ দুটি নিস্তেজ। দুর্গাপুরের বাসিন্দা তিনি। তাঁর বাড়িতে স্ত্রী ,  এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি গলসির একটি স্কুলের শিক্ষক। বাড়ি থেকে তাঁর স্কুলে যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেন। ছ ’ টায় বেরোন আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল পাঁচটা। ফিরেই টিউসন।

আলী হোসেন

দ্বিতীয় পিতা সকাল বেলা উঠেই চোখ দু’টো ডলতে থাকে মিরাজ। দুই হাতের মুষ্টি দু ’ চোখের পল্লবের উপর রেখে কব্জির মোচড়ে ডলা যা্রে বলে। বিরামহীনভাবে। মুহূর্তেই অক্ষিগোলক দুটো লাল হয়ে ওঠে, যেন জবাফুল। সঙ্গে ফুঁপিয়ে কান্না। আজ সে কোন মতে মাঠে যাবে না। গরু চরাতে ওর মোটেও ভালো লাগে না। ওর ইচ্ছা, বড় হয়ে স্কুল মাস্টার হবে। সেজন্যে যে অনেক লেখাপড়া শিখতে হবে! অথচ মা, তাকে গরু নিয়ে মাঠে পাঠাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ভারি হয়ে আসে। মনের কষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। বুকের ভেতরের চাপটা বাড়তে থাকে ক্রমশঃ। বাড়তে বাড়তে এক সময় কষ্টের মেঘ আষাঢ়ে বৃষ্টির মত কান্না হয়ে ভেঙে পড়ে। খুব করে কাঁদতে পারলেই যে বুকটা আবার মেঘমুক্ত আকাশের মত হাল্কা হয়ে যায়, কিছু সময় গলা ছেড়ে কাঁদার পর মিরাজ তা বেশ অনুধাবন করে।

তৈয়েব হোসেন

গাড়োয়ান দুপুরের খাবার পর রোজকার মত আজও এসেছে টি.ভি দেখতে। এটা তার অভ্যাস। টি.ভি না দেখলে দুটো দুখের সুখের গল্প করে বাড়ি যায় নুরমানের মা, তুমাদের টেলিভিসেন টো লাগিন দাউ কেনে গো মুসু। জিমি উত্তর দিল, কারেন নাই। নুরমানের মা বলে আ-বাছা তুদের কারেন-ই থাকে না, না থাউক গো, তুমার সাসুড়ি কুথা গেলো মেনোকা? জিমির পাঁচ বছর বয়স, কথা বলে অনর্গল। উত্তর না দিয়ে থাকতে পারে না, গল্প করবে তো? নুরমানের মা বলে, তু চুপ কর তো বাপু, ছুটু ছেলে লয় আর কথাই কথাই উত্তর দেই। বলেই পিঁড়ের কোন থেকে একটা তালাই নিয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের মনে বলতে লাগলো, অনেক দিন হয়ে গেলো লুলুনির কোনো খবর পাই নি, জানি না বাছা আমার কেমুন আছে, কে জানে? এই বলে চুপ রইলো, এমন সময় এসমসারা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে আমাদের বাড়িতে এসে বললো – ই আবার কে লো, ঘুমাইছিস না আল্লার সাতে গল্প করছিস। নুরমানের মা আস্তে আস্তে উঠে বললো, না বুন, হোসেনের বিয়ের লোক আলছিল, আমরাও দেখতে গেলছিলাম, পাকা কথা হঁয়ে গেল।

নয়ারুণ ভট্টাচার্য্য

রেবন্তর স্ববধবিলাস ‘No one ever lacks a good reason for suicide’         - Cesare Pavese (1908-50) কাল এক দীর্ঘ, দীর্ঘ রাত্রিব্যাপী পরিক্রমায় গৃহত্যাগ করিব। পরিক্রমার অন্তে দেখিব তরঙ্গবিক্ষুব্ধ এক অপার জলধি। মৃত্যু কী এমনই দেখিতে? ভাবিলেও রোমাঞ্চকণ্টকিত